![](https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/2/23/Durga_Slaying_the_Buffalo_Demon_LACMA_M.70.1.1_%281_of_7%29.jpg)
দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থের রচনাকাল নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ আছে। রামচন্দ্রন প্রমুখ অল্প কয়েকজন গবেষক মনে করেন, এটি একটি প্রাচীন পুরাণ এবং খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীর আগে রচিত। যদিও এই মত সর্বজনগ্রাহ্য নয়। অধিকাংশ গবেষকের মতে, এই গ্রন্থ খ্রিস্টীয় ৯ম থেকে ১৪শ শতাব্দীর মধ্যভাগে রচিত হয়েছিল। রাজেন্দ্র হাজরার মতে, এই গ্রন্থটি খ্রিস্টীয় ১১শ বা ১২শ শতাব্দীতে রচিত হয়। অন্যদিকে ল্যালি বলেছেন যে, খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দের শেষ দিকে এই গ্রন্থ আকার নিতে শুরু করে এবং পরবর্তীকালে পরিবর্ধিত হয়। খ্রিস্টীয় ১১শ শতাব্দীতে এই গ্রন্থটির প্রথম সম্পূর্ণ পাঠের অস্তিত্ব ছিল। ট্রেসি পিঞ্চম্যানের মতে, এই গ্রন্থ খ্রিস্টীয় ১০০০ থেকে ১২০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ে রচিত হয়।
দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থের ৭ম স্কন্ধের দশটি অধ্যায়ের (৩১ থেকে ৪০) ৫০৭টি শ্লোক মহাভারত গ্রন্থের ভগবদ্গীতা অংশের মতো পৃথক গ্রন্থাকারেও পঠিত হয়। এই অংশটির নাম দেবীগীতা। সি ম্যাকেঞ্জি ব্রাউনের মতে, এই অংশটি হয় মূল গ্রন্থ রচনাকালেই রচিত হয়, নয়তো পরে রচিত হয়ে প্রক্ষিপ্ত আকারে এই পুরাণে সংযোজিত হয়। তাঁর মতে, এই অংশটি সম্ভবত খ্রিস্টীয় ১৩শ শতাব্দীতে রচিত হয়েছিল। এমনও হতে পারে, এটি তার পরে রচিত। কিন্তু খ্রিস্টীয় ১৬শ শতাব্দীর আগেই এই অংশটি রচিত হয়।
দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থের ৯ম স্কন্ধে একাধিক শ্লোকে ‘মেচ্ছ’ (বর্বর) ও ‘যবন’ (বিদেশি) শব্দদুটি পাওয়া যায়। এই শব্দদুটির মাধ্যমে সম্ভবত পার্বত্য আদিবাসীদের বোঝায়। কিন্তু হাজরা প্রমুখ গবেষকদের মতে, যে সব শ্লোকে ‘ম্লেচ্ছ’ কথাটির উল্লেখ আছে, সেই সব শ্লোকের বিস্তারিত বিবরণগুলি পাঠ করলে বোঝা যায়, সেই সব শ্লোকগুলির রচয়িতা ইসলাম ধর্ম ও ভারতে ইসলামের প্রসার সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। প্রধান গবেষকদের মতে, ৯ম স্কন্ধের এই অংশগুলির রচনাকাল খ্রিস্টীয় ১২শ থেকে ১৫শ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়। এই অংশগুলি গ্রন্থের মূল অংশটির পরবর্তীকালে রচিত। দেবীভাগবত পুরাণ মহাশক্তি-কেন্দ্রিক কোনো প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্র নয়। মার্কণ্ডেয় পুরাণ গ্রন্থের অন্তর্গত দেবীমাহাত্ম্যম্ অংশে খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীতেই মহাশক্তিকে সর্বোচ্চ দৈবসত্ত্বার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ভারতের মথুরা ও বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে পুরাতাত্ত্বিক খননকার্য চালিয়ে যে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, তার থেকে বোঝা যায় খ্রিস্টীয় ২য় শতাব্দী থেকেই মহাশক্তি উপাসনা প্রচলিত ছিল। শাক্ত সম্প্রদায়ে দেবীমাহাত্ম্যম্ ও দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থদুটি বিশেষ প্রভাবশালী। এই দুই গ্রন্থেই দেবীশক্তির শ্রেষ্ঠত্ব ও ভক্তিমূলক শক্তি-উপাসনার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
সমগ্র পুরাণ সাহিত্য ও মহাভারত গ্রন্থের সঙ্গে এই পুরাণটিও প্রথামতে ব্যাসের রচনা। ‘দেবীভাগবত’ নামটি ‘দেবী’ ও ‘ভাগবত’ শব্দদুটির সংযুক্তির মাধ্যমে সৃষ্ট। এই শব্দবন্ধের অর্থ ‘দেবীশক্তির ভক্ত’। খ্রিস্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দে রচিত বৈদিক সাহিত্যেই ‘দেব’ ও ‘দেবী’ শব্দদুটি পাওয়া যায়। সেখানে ‘দেব’ শব্দটি পুংলিঙ্গ ও ‘দেবী’ শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ। মনিয়ার উইলিয়ামস এই নামদুটির অর্থ করেছেন, “স্বর্গীয়, দিব্য, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পার্থিব সত্ত্বা, গৌরবোজ্জ্বল সত্ত্বা।” ব্যুৎপত্তিগতভাবে সংস্কৃত ‘দেবী’ লাতিন dea ও গ্রিক thea শব্দের অনুরূপ। ‘ভাগবত’ শব্দের অর্থ ‘ঈশ্বরের ভক্ত’।
No comments:
Post a Comment